Sunday, November 17, 2019

বুক রিভিউ ।। বই: উপমহাদেশ ( মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস) ।। লেখক: আল মাহমুদ

বই পড়া ভারি মজা-১৯
বুক রিভিউ 
বই: উপমহাদেশ ( মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস) 
লেখক: আল মাহমুদ 
রিভিউ : মরিয়াম মুন্নী 
...........................................
"উপমহাদেশ" কবি আল মাহমুদ রচিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার জীবনচিত্রকে আশ্রয় করে লেখা উপন্যাসটিকে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলা না গেলেও যুদ্ধের ভয়াবহতা, হিংস্রতা, যুদ্ধের মাঝে প্রেম, দেশপ্রেম সব কিছুরই প্রতিচ্ছবি সত্যনিষ্ঠ ভাবে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন লেখক। বই আকারে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে শিল্পতরু প্রকাশনী থেকে। 'ঐতিহ্য' থেকে প্রকাশিত আল মাহমুদ রচনাবলির ৫ম খণ্ডে যুক্ত করা হয়েছে উপন্যাসটি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক এই উপন্যাসটির নাম রাখা হয়েছে 'উপমহাদেশ'। উপন্যাসটি শুরু হয়েছে পরাধীন বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তানে, কাহিনী গিয়ে পৌঁছেছে ভারতে, উপন্যাসের শেষ দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে। আক্ষরিক অর্থেই উপন্যাসের ব্যাপকতা ছিল উপমহাদেশ জুড়ে। তাছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের একক কোন বিষয় না থেকে ভারত - পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই যুদ্ধ প্রভাবিত করেছিল পুরো ভারত উপমহাদেশের রাজনৈতিক চিন্তা চেতনাকে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই হয়তো 'উপমহাদেশ' নামকরণ।
উপন্যাস মাত্রই একটা সংঘবদ্ধ 'প্লট' থাকবে। এই উপন্যাসের গল্পও এগিয়েছে একটা নিদর্ষ্ট প্লটকে কেন্দ্র করে। যুদ্ধের ভয়াবহতা, দেশত্যাগ, শরণার্থী জীবন, মানবীয় প্রেম - বিরহ সবকিছুই এক সুতোয় বেঁধেছেন 
কেন্দ্রীয় চরিত্র কবি হাদী মীরের বর্ণনায়। পাকিস্তানীদের দানবীয় হামলার মুখে দেশ ছাড়তে গিয়ে কবি হাদীর পরিচয় হয় নন্দিনী আর তার বোন সোমার সাথে। আগন্তুক কিছু পুরুষের হাত থেকে নন্দিনীকে বাঁচাতে তাকে নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় দেন কবি। সেখানেই লেখক দুজনের ভাগ্যকে জুড়ে দেন একসাথে। কবির সর্বাত্মক চেষ্টা স্বত্বেও নন্দিনী, সোমা দুই বোনই রাজাকারদের পাশবিকতার শিকার হয়। গুলি লেগে মারা যায় সোমা আর নন্দিনী হয়ে পড়ে কবির উপর নির্ভরশীল। অসহায় নন্দিনীর প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই হোক আর নারী - পুরুষের স্বভাবজাত আকর্ষণ থেকেই হোক নন্দিনীর পাশে থাকবার যে প্রতিশ্রুতি কবি তাকে দিয়েছিলেন সেটা ডাল পালা মেলে প্রেমে পূর্ণতা পায়। সময়ের সাথে যুদ্ধের ভয়াবহতা যেমন বাড়ে তেমনি বাড়তে থাকে এই দুই নর নারীর পারস্পরিক প্রেম। উপন্যাসের কাহিনী চক্রে সামনে আসে অস্থায়ী সরকারের কার্যক্রম, প্রকাশ পায় মুক্তিযুদ্ধের প্রতি কলকাতার লেখকদের সুহৃদ মনোভাব, খোঁজ পাওয়া যায় কবি পত্নী হামিদার, আসে মার্কসবাদী বিপ্লবীদের প্রতিরোধ যুদ্ধের কথা, আসে বাংলাদেশ মানুষের উপর নির্যাতন এবং বাংলাদেশীদের প্রতিবাদের গল্প।
চরিত্র চিত্রণে লেখকের দক্ষতা অনস্বীকার্য। কেন্দ্রীয় চরিত্র কবি হাদী মীর। চরিত্রটি লেখকের আত্মজৈবনিক ছোঁয়া থেকে একেবারে মুক্ত নয়। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বলেই তাকে যুদ্ধে অকুতোভয় সৈনিক হিসেবে যেমন দেখানো হয়নি, তেমনি দেখানো হয়নি দেশের প্রতি দায়হীন ভাবেও। স্ত্রী থাকা সত্বেও বিধর্মী নারীর সাথে তার প্রেমে জড়িয়ে পড়া নিয়ে সামাজিকতার ভয় থেকে কবি মুক্ত ছিলেন না। এমনকি নন্দিনীর প্রতি তার মোহগ্রস্ততা স্বত্বেও উপেক্ষা করতে পারেননি স্ত্রী হামিদাকে। যুদ্ধের বিক্ষুব্ধতার মাঝে ভেঙে পড়া নৈতিকতা রক্ষায় মানুষের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনর প্রতীক কবি। বিবাহিত মুসলিম কবি হাদীর প্রেমে পড়া, কবি পত্নী হামিদার প্রতি তার সাময়িক ঈর্ষা স্বত্বেও যুদ্ধে সর্বোস্ব হারানো নন্দিনী ভট্টাচার্যের বেঁচে থাকার আত্মপ্রত্যয়, জীবন বাজি রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতে দেশে ফিরে যাওয়া, একটু আশ্রয়ের আশায় এমনকি ধর্ম ত্যাগ করতে চাওয়া বা কবি পত্নীকে বোন বলে মেনে নেয়া তাকে পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। উপন্যাসের আরেকটি প্রধান চরিত্র হামিদা। পুরো উপন্যাসে তার শারিরিক উপস্থিতি দু'বারের বেশি না হলেও কবি পত্নী, তেজস্বী, যোদ্ধা, মমতাময়ী এই নারী চরিত্রটির প্রতিপ্রত্তি ছিল উপন্যাসের প্লট জুড়েই।
মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক চিত্র উপন্যাসটিতে লেখক তুলে ধরতে পেরেছেন তেমন দাবী করা যায় না, হয়তো সম্ভবও নয় সেটা। যুদ্ধের উন্মাদনায় মানবিকতা কতোটা ভেঙে পড়ে তা দেখানোর চেষ্টা করেছেন লেখক। হত্যা, ধর্ষণ, রাহাজানি এমন কোন বর্বরতা নাই যা করেনি পাক বাহিনী আর তার দোসররা। এমনকি নৈতিক স্খলন ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি কিছু কিছু মুক্তিযোদ্ধাও, তারাও নারীদের উপর পাশবিক হয়ে উঠেছিল। প্রবাসী সরকারের আন্তরিকতা এবং অসহায়তা দুটিই তুলে ধরেছেন লেখক। তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভারতের আন্ত- রাজনৈতিক হিসেব নিকেশ। সেই সাথে স্বাধীন বাংলাদেশের উপর ভারতীয় উপনিবেশের ভবিষ্যত চিত্র নিয়ে মার্কসবাদীদের বিরূপ মনোভাবের কথা। বর্ণনার সাবলীলতা বিষয়বস্তুকে আরো হৃদয়গ্রাহী করে তুলেছে। 'উপমহাদেশে'র উপস্থাপন শৈলী আর কাহিনীর সংঘবদ্ধতা পাঠককে আটকে রাখবে বইয়ের পাতায়।

Monday, October 9, 2017

ব্যতিক্রমী ‘মানব মানচিত্র’

লাখো শহীদের রক্তে পাওয়া বাংলাদেশ ভূখণ্ডের আদলে ব্যতিক্রমী ‘মানব মানচিত্র’ তৈরি করে সাড়া ফেলেছে বগুড়া জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার দুপুর ১২টায় জিলা স্কুল মাঠে এই মানব মানচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এতে অংশ নেয় বিদ্যালয়ের ১ হাজার ৩৫৬ শিক্ষার্থী।
জিলা স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী সাকিব আল মাহমুদের দীর্ঘ এক বছরের প্রচেষ্টায় এ উদ্যোগ সফল হয়। তার এ উদ্যোগে শামিল ছিল আরও পাঁচ শিক্ষার্থী।
সাকিব এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেছে, কয়েক বছর আগে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ৩ হাজার ৯৪৭ জন মানুষের অংশগ্রহণে তৈরি মানব মানচিত্র গিনেস বুকে স্থান করে নেয়। তখন বাংলাদেশেও মানব মানচিত্র তৈরির পরিকল্পনা তার মাথায় আসে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এক বছর ধরে নিজের বিদ্যালয় মাঠে মানব মানচিত্র তৈরির অনুশীলন করতে থাকে তারা।
২৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় দিনে ৫৭২ শিক্ষার্থীকে দিয়ে পরীক্ষামূলক মানব মানচিত্র তৈরি করা হয়। বিদ্যালয় মাঠে প্রদর্শিত এ মানব মানচিত্র দেখে শিক্ষকেরা ভূয়সী প্রশংসা করেন। আজ চূড়ান্তভাবে ১ হাজার ৩৫৬ শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ মানব মানচিত্র তৈরি করা হয়। জিলা স্কুল মাঠে প্রদর্শিত আয়োজন দেখতে শিক্ষার্থী ছাড়াও ভিড় করেন অনেক অভিভাবক ও দর্শক।
সাকিব আল মাহমুদ বলল, ‘নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। লাখো শহীদের রক্ত আর নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। খুব ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশের এই মানচিত্র ব্যতিক্রমিভাবে উপস্থাপন করার। এক বছর ধরে বাংলাদেশের মানচিত্রের আদলে নির্ভুল মানব মানচিত্র তৈরির কাজে লেগে পড়ি। এসএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পর বিদ্যালয় থেকে বিদায় নেওয়ার দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছিল, মানব মানচিত্র বাস্তবে রূপ দিতে না পারার ব্যর্থতায় তত কষ্ট পাচ্ছিলাম। তবে শেষ পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায়ের দিনে পরীক্ষামূলকভাবে কাজটি করতে সফল হই। ড্রোন উড়িয়ে ওই মানব মানচিত্রের ছবি তোলা হয়। মানব মানচিত্রের এই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিত হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণায় আজ বিদ্যালয় মাঠে তা চূড়ান্তভাবে প্রদর্শনের উদ্যোগ নিই।’
মানচিত্র তৈরির কৌশল সম্পর্কে জানাতে গিয়ে সাকিব বলে, প্রথমে মাঠে চুন ছিটিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রের আদল তৈরি করা হয়। এরপর চুনের ওপর ১ হাজার ৩৫৬ শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে মানব মানচিত্রে অংশ নেয়। এ কাজে সহযোগিতা করে তাঁর সহপাঠী মিথুন প্রামাণিক, তানজিম আলম, ঈসমাইল হোসেন ও আল আসের ইশরাক এবং সরকারি শাহ সুলতান কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান।
বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু নূর মোহাম্মদ আনিসুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীরা দুর্দান্ত মানব মানচিত্র তৈরি করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এমন উদ্যোগের ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা ছড়িয়ে পড়বে।