Thursday, July 21, 2016

ডিপ্রেশন বা হতাশা

অনেকেই জীবনে বিভিন্ন ট্রমাগত কারণে নিজের প্রতি আস্থা হারিয়ে ডিপ্রেসড এবং ট্র্যাকলেস হয়ে পড়েন। কি করবেন, কার কাছে যাবেন, কাকে বলবেন, কিছুই বুঝতে পারেন না। এটা যে শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রেই হয় তা কিন্তু নয়! সেটা নারী-পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে সবার ক্ষেত্রেই হতে পারে। যেমন, নিজের পড়াশোনা বা ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা, পরিবারের সদস্য বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে হতাশা, সমাজ এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে হতাশা, নিজের শারীরিক-মানসিক সীমাবদ্ধতা নিয়ে হতাশা। আবার, অনেক সময় ব্যক্তি নির্যাতিত হতে পারেন তাঁর খুব কাছের প্রিয় মানুষদের মাধ্যমে, সেটা তাঁর অজ্ঞাত ও জ্ঞাত সারে....সেটি নিয়েও হতাশা..
ডিপ্রেশন বা হতাশা শব্দটির ব্যাপকতা ভয়াবহ। যদি ১৫ দিনের বেশী একটানা মন খারাপ থাকে, কোন কিছুই ভাল না লাগে, সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে ইচ্ছা হয়, কারো সাথে মিশতে বা কথা বলতে ইচ্ছা না করে, কোথাও যেতে বা অংশ গ্রহণ করতে ইচ্ছা না করে, একাকীত্ব পেয়ে বসে, যাবতীয় কাজে অনীহা আসে... এমনকি খাওয়া, ঘুম ও হজমেরও ব্যঘাত ঘটে (অনেকেই এ সময় খুব বেশী বেশী খাওয়া দাওয়া করেন, আবার অনেকেই একদমই খেতে চান না বা খাওয়ার ইচ্ছাটাই হয় না!) তাহলে বুঝতে হবে আপনি ডিপ্রেশনের পথে হেঁটে চলেছেন।
ডিপ্রেশনটাকে আমরা মানসিক বা আবেগীয় সমস্যা বলতে পারি। ডিপ্রেশন দীর্ঘদিন চলতে থাকলে এর কারণে কিছু শারীরিক রোগও বাসা বাঁধে! যেমন: মাথা ব্যথা, পিঠ ব্যথা, মাসল এবং জয়েন্ট পেইন, বুক ব্যথা, হজমে গোলমাল, অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ করা, অনিদ্রা, ক্ষুধামান্দ্য, মাথা ঘোরা, ইত্যাদি।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা: কি করবেন?
নিজেকে সময় দিন.... কাছের বা পছন্দের মানুষদের সাথে বেশী করে সময় কাটান...দূরে কোথাও প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে ঘুরে আসুন। প্রতিদিন ৪৫/৫০ মিনিট হাঁটুন, যোগ ব্যায়াম বা ইয়োগা করতে পারেন। প্রকৃতি বা নেচার এর কাছে বিশেষ করে ফরেস্ট বা গাছ গাছালির মাঝে হারিয়ে যান। কোন পানি যেমন, সাগর, নদী, পুকুর বা লেইকের কাছে যেয়ে নিভৃতে সময় কাটান। কেননা, এগুলি আপনার মনকে আন্দোলিত, উদ্বেলিত করবে। শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করবে এবং আপনার ব্রেইনও পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পাবে, অক্সিজেন পেলে আপনার ব্লাড সার্কুলেশন ভাল হবে। ব্লাড সার্কুলেশনের মাধ্যমে আপনি এনার্জি পাবেন, ঘুম ভাল হবে, নার্ভ কুল বা শান্ত থাকবে এবং তাতেই আপনি, নতুন করে কাজের উদ্দীপনা পাবেন।
ডিপ্রেশন ক্রনিক পর্যায়ে চলে গেলে সাধারনতঃ বিশেষজ্ঞরা ওষুধ এবং থেরাপী দুইয়েরই সাহায্য নেন। এই ক্ষেত্রে অন্যান্য থেরাপীর পাশাপাশি কগনেটিভ বিহেভিয়রাল থেরাপীটা খুব ভাল ভূমিকা রাখে। ডিপ্রেশন দূর হলে এর কারণে সৃষ্ট শারীরিক সমস্যাগুলিও দূর করা সম্ভব। সম্পূর্ণ সুস্থ থাকার জন্য দেহ এবং মনকে যত্ন করুন! কারণ এরা একে অপরকে ছাড়া বাঁচতে পারে না ও পরিপূরকও বটে।
তাই আর দেরি না করে চলে আসুন কোন সাইকোথেরাপিস্ট বা কাউন্সেলর এর কাছে.....সেই ক্ষেত্রে ব্যক্তিটির খুব কাছের মানুষ যদি হন আপনি, তাহলে তাঁর আচরণের পরিবর্তনগুলি চোখে পড়ার সাথে সাথেই আপনার সত্যিকারের বন্ধুত্বের হাতটি বাড়িয়ে দিন। আপনার এই শক্ত হাতই তাঁকে বেঁচে থাকতে অনুপ্রাণিত করবে..... 

No comments:

Post a Comment