অনেকে হঠাৎ করে অযথা নিজেকে খুব বড় মাপের ভাবতে শুরু করেন! আবার কেউ কেউ নিজেকে নিজের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও খুবই ছোট, তুচ্ছ ভাবেন! এটি এক ধরণের কমপ্লেক্স। ব্যক্তির ভেতর দুই ধরণের কমপ্লেক্সিটি তখনই কাজ করে, যখন তিনি স্বাভাবিক মানুষের মত স্বাভাবিক থাকতে পারেন না! এবং আচরণের ভারসাম্যও বজায় রাখতে পারেন না। নিজের কনফিডেন্স লেভেল কমে যাওয়ার বা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার বিভিন্ন ধরণের কারণ রয়েছে! যেমনঃ শিশুকালীন সময়ে নিরানন্দময় বাড়ীর পরিবেশ, বিভিন্ন ধরনের ট্রমা বা শক! বাড়ীতে বাবা, মায়ের এবং পারিবারিক অশান্তি, একজনের সাথে আরেক জনের তুলনা-সমালোচনা, ওভার-প্রটেকটেড বা রিজেকটেড সন্তান ইত্যাদির জন্য প্রধানতঃ কমপ্লেক্সের জন্ম! অনেক সময়, এই কমপ্লেক্স থেকে মুডও ওঠানামা করে! অনেকে আবার আদর করে বলেন, "ও খুব মুডি"! এই মুড যখন নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, আপনি জেনে অবাক হবেন যে এটির সাথে এক ধরণের আবেগজনিত মানসিক রোগের নাম ও বৈশিষ্ট্য জড়িয়ে আছে! এ রোগটির নাম "বাই পোলার মুড ডিসঅর্ডার"!
যদি কখনও কাউকে খুব উচ্ছ্বসিত, আবার একটু পরেই, অন্য সময় খুবই বিরক্ত হতে দেখা যায় অর্থাৎ, তাঁর মুডটা খুব তাড়াতাড়ি ওঠানামা করে এবং সেই সাথে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য বহন করেন, তখনই বুঝতে হবে ব্যক্তিটি "বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার" নামক রোগের সাথে হেঁটে চলেছেন।
এটিতে আক্রান্ত ব্যক্তির আবেগের দুটি পর্যায় থাকে। একটি হলো ম্যানিয়া বা হাইপো ম্যানিয়া। অন্য আরেকটি পর্যায় হল ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা। বাইপোলার ডিসঅর্ডার অনেক সময় বংশগত কারণেও হয়। যাদের নিকটাত্মীয়ের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস আছে, তাঁদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশী। মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৮ বছর বা তদুর্ধ বয়সীদের শতকরা ০.৪ জন, অর্থাৎ প্রতি হাজারে ৪ জন এ ধরণের রোগে আক্রান্ত!!
ম্যানিয়া পর্যায়ের ব্যক্তিরা নিজেকে খুবই ক্ষমতাবান, টাকা পয়সার মালিক মনে করেন। অত্যাধিক আনন্দ ফুর্তির সাথে আবার বিরক্তও বোধ করেন। অতিরিক্ত কথা, মানে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী কথা বলেন, অতিরিক্ত উত্তেজনা, আবার অতিরিক্ত কাজের স্পৃহাও দেখা যায়! কোন নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পারেন না। কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে বেশীক্ষণ মনোযোগও ধরে রাখতে পারেন না! বেশী খরচ বা দান করেন, ঘুম কমে যায়, অনেকের সেক্সের ব্যপারে আগ্রহ বেড়ে যায়। এ সব উপসর্গ টানা সাত দিনের বেশী থাকলে একে ম্যানিয়া বলা হয়! উপসর্গের তীব্রতা ও স্থায়ীত্ব কম হলে একে হাইপো ম্যানিয়া বলে।
অনেকের ক্ষেত্রে শুধু ম্যনিয়া পর্যায়টিই দৃশ্যমান হয়। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এ পর্যায়টি সারা জীবনে ২/১ বারও দেখা দিতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে বছরে নির্দিষ্ট সময়ে হতে পার, আবার কয়েক বছর পর পরও হতে পারে। রোগের তীব্রতা বেশী হলে চিকিৎসকের নিকট চিকিৎসা নিতে হবে। যে কোন পেশার, যে কোন শ্রেণীর মানুষই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কেউ কেউ বলেন, এ রোগের রোগীরা খুবই মেধাসম্পন্ন হয়ে থাকেন। যদিও এর কোন যুক্তি নেই। রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে ব্যক্তি তার বুদ্ধিমত্তা ও প্রতিভা অনুযায়ী সফলতা পেতে পারেন! রোগীর অবস্থানুযায়ী তার জন্য বাস্তবভিত্তিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা যেতে পারে।
বাই পোলার মুড ডিসঅর্ডার যেহেতু একটি আবেগজনিত মানসিক রোগ, তাই এটির জন্য নিয়মিত মেডিসিন এবং কাউন্সেলিং এর প্রয়োজন। শরীরের ব্যাধিতে যেমন দরকার চিকিৎসার, ঠিক এটির ক্ষেত্রেও দরকার মনোচিকিৎসার!
সুতরাং মনের পরিচর্যা করুন, নিজেকে সুস্থ ও সুন্দর রাখুন এবং ভাল থাকুন !
No comments:
Post a Comment